সিলেট প্রতিনিধি :: সিলেটের দক্ষিণ সুরমার আলমপুরে সুরমা নদীর তীরে অবস্থিত বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস। এই অফিসে আসা মানুষজনকে তীব্র ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। অনিয়ম যেখানে নিয়মে পরিণত হয়েছে। জরুরি পাসপোর্ট ১১ দিনে ও সাধারণ পাসপোর্ট ২১ দিনে দেয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তা হয় না। সিলেট বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিস প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটবাসীর সেবার মান বৃদ্ধির জন্য ভাড়া বাড়ী ছেড়ে পাসপোর্ট অফিসকে বিগত ২০১৫ সালের আগষ্টে নিজস্ব ভুমিতে বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের কার্যক্রম শুরু হয়। তৎকালিন পরিচালক কফিল উদ্দীন ভুইয়া দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
শুরুতেই সেবার বদলেই দূর্নীতি,অনিয়ম ও হয়রানি চরম আকার রূপ নিলে গ্রাহক ও স্থানীয় অধিবাসীদের সাথে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে পাসপোর্ট অফিস। এরই প্রেক্ষিতে অফিসে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা গঠলে গ্রাহক ও স্থানীয়দের বিরুদ্ধে মামলা হয়। পরবর্তিতে কতৃপক্ষ কফিল উদ্দিন ভুইয়াকে প্রত্যাহার করে উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুনকে সিলেট অফিসে নিয়োগ প্রদান করেন। যার প্রেক্ষিতে পাসপোর্ট অফিসে কিছুটা শৃখংলা ফিরে আসে। উপ পরিচালক আব্দুল্লাহ আল- মামুন পদোন্নতী জনিত বদলী হলে শেখঘাটে অফিস থাকাকালীন বির্তকিত সহকারী পরিচালক, বর্তমানে সিলেট বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের পরিচালক মাযহারুল ইসলাম যোগদান করেন। এরপর থেকে পুরোনো সিন্ডিকেট আবার সক্রিয় হয়ে উঠে। তিনি সপ্তাহে তিন চার দিন অফিস করে বৃহস্পতিবারে সকালের ফ্লাইটে ঢাকা চলে যান এবং রবি-সোমবারে ফ্লাইটে সিলেট এসে অফিস করেন।
ভূক্তভোগী গ্রাহক, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, সুশীল সমাজের লোকজন কোন প্রয়োজনে তার কাছে দেখা করতে গেলে তার দেখা পাওয়া যায় না। ফোন করলে ফোন রিসিভ করেন না বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সিলেট বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে দৈনিক ৩ থেকে সাড়ে ৩শ’ আবেদন জমা পড়ে। পাসপোর্ট করতে আসা গ্রাহকরা পরিচালকের নিজস্ব সিন্ডিকেট নির্ধারিত মার্কা (চেনেল) ছাড়া ফরম জমা করতে গেলে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে কাউন্টার থেকে উপ সহকারী পরিচালক ফরিদ উদ্দীন ও অফিস সহকারী দীপক আবেদন ফিরিয়ে দেন। এর মধ্যে ২০ থেকে ৩০টি আবেদন ‘মার্কা’ (পাবলিক) ছাড়া জমা হয় এবং বাকি সবই ‘চ্যানেল মার্কা’ দিয়ে জমা দেওয়া হয়ে থাকে। অনেকে মনে করেন অফিসের কর্মচারীরা একই অফিসে প্রায় ৪/৫ বছর যাবত একক মেয়াদ কালিন ভাবে চাকুরী করার কারনে এই সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে।
সুত্রে জানা গেছে, অফিসের নিযুক্ত কর্মচারী, আউটসোসিং নাইট গার্ড আনোয়ার ও এমএলএসএস সুমন বহিরাগত দালালদের মাধ্যমে আবেদন ফাইল প্রতি ১১শত টাকা নিয়ে নির্ধারিত মার্কার মাধ্যমে আবেদন ফরম জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। উপ সহকারী পরিচালক ফরিদ উদ্দীন ও অফিস সহকারী দীপক ফাইলগুলো গ্রহণ করে থাকেন। বিকেলে মার্কা দেয়া ফাইলগুলো পৃথক করে তাদের কাছ থেকে নির্ধারিত হারে টাকা গ্রহণ করা হয়। যাদের ফাইলে ‘মার্কা’ নেই সেগুলো আলাদা করে অফিস সহকারী দিপকের আলমিরার মধ্যে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। পরিচালকের নির্দেশে মার্কা ছাড়া ফাইলগুলো পৃথক করে সপ্তাহ থেকে দশদিন পর্যন্ত বাক্সবন্দি করে রাখার পর পুলিশ অফিসে প্রেরণ করা হয়। প্রেরণকালে পুলিশ প্রতিবেদনের জন্য পাঠানো ফাইল থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র সহ বিভিন্ন জরুরী কয়েকটি কাগজপত্র ছিড়ে ফেলে দেওয়া হয় গ্রাহকদের হয়রানীতে ফেলার জন্য। পুলিশ প্রতিবেদন যাওয়ার পর আবার সপ্তাহ-দশদিন বন্দি রেখে পরে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়ে থাকে। যার ফলে সরকারি ফি পরিশোধ করেও নির্ধারিত সময়ের ৩/৪ মাসপর পাসপোর্ট অফিসে পাসপোর্ট নিতে আসা গ্রাহককে অফিস সহকারী মুরাদ পাসপোর্ট আসেনি বলে হয়রানী করেন আবার দুই-তিন শত টাকা নিয়ে পাসপোর্ট প্রদান করেন।
সাধারণ মানুষের অভিযোগ, বারবার ধর্না দিতে হয় অফিসের কর্তাব্যক্তি ও কর্মচারীদের কাছে। সরকারি নিধারিত ফি থেকে দ্বিগুণ-তিনগুন টাকা গুনতে হয় আবেদনকারীদের।
অভিযোগকারীদের বক্তব্য, ট্রাভেলেস এজেন্সির গুলোর অতিরিক্ত ১১শত টাকা দেয়া ফাইল ও অফিস সিন্ডিকেটের মার্কা ছাড়া পাবলিক ফাইল গুলো উধাও হয়ে যায়। পরে বের করে দেয়ার নামে আলাদা টাকাও হাতিয়ে নেয়া হয় সাধারণ মানুষের কাছ থেকে। গ্রাহকদের সাথে অফিসের কম্পিউটার অপারেটার লতিফা ও সাকিবসহ অফিসের অন্যান কর্মচারীরা খারাপ ও অশুভ আচরণ করে থাকেন বলে একাদিক অভিযোগ আছে।
পাসপোর্ট অফিসে আসা ভূক্তভোগি গ্রাহক শরীফ উদ্দিন এ প্রতিবেককে জানান, জকিগঞ্জ থেকে বৃদ্ধা মা কে নিয়ে পাসপোর্ট করতে এসেছেন পবিত্র হজ্জ্বে যাওয়ার জন্য। ফাইলে সবকিছু ঠিক থাকলেও বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে তা ফেরত দেওয়া হয়। ৩/৪ দিন বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে তাকে হয়রানীর পর ১৫শত টাকা দিয়ে মার্কার মাধ্যেমে জমা দেওয়া হয়।
আরেক ভূক্তভোগি নগরীর দক্ষিণ সুরমার সজিব আহমদ বলেন, সব ঠিক থাকার পরও তার জরুরী ফিস দেওয়া ফরমটি জন্মসনদের পরিবর্তে জাতীয় পরিচয়পত্র ও চেয়ারম্যান দিয়ে ফাইল সত্যায়িত করে জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়। পরের দিন তিনি জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি সত্যায়িত করে নিয়ে যাওয়ার পার অফিস সহকারী দিপক প্রাইভেট সার্ভিসের সনদপত্র সঙ্গে দেওয়া কথা বলে ফাইলটি ফেরত প্রদান করেন। অথচ ট্রেভেল এজেন্সির মাধ্যমে পাসপোর্ট করেতে করতে গেলে একাধিক ভুল থাকলেও অফিসের লোকজন সংশোধন করে নেন। তিনি পরবর্তিতে তার ফাইলটি অফিস সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ২ হাজার টাকা দিয়ে জমা প্রদান করেন।
বিষয়টি নিয়ে সিলেট বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের পরিচালক মাযহারুল ইসলাম এর মুঠোফোনে বার বার যোগাযোগের চেষ্ঠা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
পাঠকের মতামত: